বিশেষ প্রতিনিধি
প্রেসক্লাব রংপুর এর কাগজপত্র প্রশাসক কে বুঝিয়ে না দেয়ায় দীর্ঘ ৩৩ বছরের অডিট কার্যক্রম শুরু করতে পারছে না সরকার প্রজ্ঞাপিত প্রশাসক। এ বিষয়ে সার্চ ওয়ারেন্ট হলেও পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করছে, এতে ক্ষুব্ধ সাংবাদিক সমাজ। এছাড়াও সরকারি নির্দেশ অমান্য করে রংপুর প্রেসক্লাব দখলের অপচেষ্টা মামলার আসামি মেরিনা লাভলীসহ সহযোগীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে রংপুরে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ ও বৈষম্য বিরোধী সাংবাদিক আন্দোলন।
বুধবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে জেলা প্রশাসক ও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছে জমা দেওয়া এক স্মারকলিপিতে এ দাবি জানানো হয়।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, জুলাই বিপ্লবের পর সরকার বৈষম্য দূরীকরণে বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধনকৃত রংপুর প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী রংপুরে কর্মরত সকল সাংবাদিকের সদস্য হওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও, দীর্ঘ তিরিশ বছর ধরে মাত্র ৩৩ জন সদস্য প্রেসক্লাবকে কুক্ষিগত করে রেখেছেন। এতে সাংবাদিকদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি হয়েছে এবং বাধ্য হয়ে ‘বৈষম্য বিরোধী সাংবাদিক আন্দোলন’ গড়ে উঠেছে।
অভিযোগে বলা হয়, বহিষ্কৃত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও মহিলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেরিনা লাভলী তার সহযোগীদের নিয়ে সাংবাদিকদের সদস্যভুক্ত হতে দীর্ঘদিন ধরে বাধা সৃষ্টি করছেন। এমনকি গত ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ সালে তিনি সহযোগীদের নিয়ে প্রেসক্লাবে অবৈধভাবে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন। এ ঘটনায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে রংপুর কোতয়ালী থানায় মামলা (মামলা নং-৩০/২৫) দায়ের করা হলেও আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেফতার করেনি।
স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রেসক্লাবের নথিপত্র মেরিনা লাভলী তার নিজ বাড়িতে গোপন করে রেখেছেন। এ বিষয়ে এডিএম আদালত তার বিরুদ্ধে সার্চ ওয়ারেন্ট জারি করলেও পুলিশ কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। ফলে সাংবাদিকদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।
সাংবাদিক নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, অবিলম্বে মেরিনা লাভলীসহ মামলার সকল আসামিকে গ্রেফতার এবং সার্চ ওয়ারেন্ট কার্যকর করতে হবে। অন্যথায় রংপুরে কর্মরত সাংবাদিকরা বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন।
বৈষম্য বিরোধী সাংবাদিক আন্দোলন রংপুরের প্রধান সমন্বয়ক এসএম জাকির হুসাইন বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর আওয়ামী দোষররা প্রেসক্লাব রংপুর দখল করে রেখেছিল। রংপুরে আড়াই শতাধিক সাংবাদিক থাকলেও প্রেসক্লাবের সদস্য মাত্র ৩৩ জন ছিল। গণঅভ্যুত্থানের পর তাদের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনের মুখে কমিটি বিলুপ্ত করে দিয়ে সরকার প্রশাসক নিয়োগ করে। এবং রাষ্ট্রনিযুক্ত প্রশাসক, সদস্য অন্তর্ভুক্তি করন সহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। দীর্ঘ অনিয়মের অডিট করার জন্য প্রশাসকের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মেরিনা লাভলিকে প্রেসক্লাবে নথিপত্র বুঝে দেয়ার জন্য দফায় দফায় চিঠি দিলেও তিনি তা আমলে নেননি। এর প্রেক্ষিতে কাগজপত্র বুঝে নেয়ার জন্য এডিএম কোর্ট থেকে ২৪ দিন আগে সার্চ ওয়ারেন্ট জারি করা হয় মেরিনা লাভলীর বিরুদ্ধে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মহানগর পুলিশ এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি । কাগজপত্র না থাকায় অডিট শুরু করতে পারছে না প্রশাসক।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র নিযুক্ত প্রশাসক প্রেসক্লাবের কমিটি বহিষ্কার করে প্রেসক্লাবের কার্যক্রম শুরু করলেও ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ আওয়ামী লীগ নেত্রী মেরিনা লাভলি সহযোগীদের নিয়ে প্রেসক্লাবে হামলা চালান। এর প্রেক্ষিতে সমাজসেবা অধিদপ্তর সরকারি কাজে বাধা দেয়ার জন্য মেরিনা লাভলি সহ দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। সেই মামলার সাত মাস অতিবাহিত হলেও তাদেরকে পুলিশ গ্রেফতার করছে না। উল্টো তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মামলার আসামি হয়েও৷ প্রেসক্লাবের রাষ্ট্রপক্ষের নিযুক্ত প্রশাসকের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে মিথ্যা, অসত্য এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে আদালতে মামলা করছে। এতে সাংবাদিক মহলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
এস এম জাকির হোসেন বলেন, পুলিশ প্রশাসনের এ ধরনের নিষ্ক্রিয়তা প্রমাণ করে, তারা এখনো আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পক্ষ নিয়ে গণঅভ্যুত্থান কে বিতর্কিত করতে চাচ্ছে। আমরা বড় ধরনের আন্দোলনে নামতে চাইনা পুলিশের বিরুদ্ধে। তবে, ধৈর্যের বাঁধ ছিড়ে গেলে আমরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব। যার সব দায়দেনা নিতে হবে পুলিশ প্রশাসনকে।
স্মারকলিপি গ্রহণ করে রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানান, আপনাদের অভিযোগুলো আমার খুব গুরুত্বের সাথে দেখছি, আমরা দ্রুতই এব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত আছি, আসামিদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।