Home সারাদেশ কক্সবাজার সদরে শতবর্ষী গাছ কাটার অভিযোগ

কক্সবাজার সদরে শতবর্ষী গাছ কাটার অভিযোগ

31
0

এম এ সাত্তার, কক্সবাজার:

কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড রহমতপুর এলাকায় বিরোধপূর্ণ জমি থেকে শতবর্ষী গাছ কেটে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে নুরুল ইসলাম প্রকাশ ডাকাত নুরু, জাহাঙ্গীর আলম, আবদুল মালেক, মোর্শেদ আলম টিটু, কামাল পাশা ও সাইফুল ইসলাম, নাজমুল হোসেন সহ আরো ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নুরুল আলম জড়িতদের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার (১৯ আগষ্ট ) কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার (দক্ষিণ) বিভাগীয় বন কর্মকর্তার অফিস, পরিচালক পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়, ইউএনওর সদর, অফিসার্স ইনচার্জ সদর থানা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। এর আগে, সোমবার বিকেলে সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের রহমতপুর গ্রামে এঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, রহমতপুর গ্রামের মৃত লাল মিয়ার ছেলে নুরুল আলমের সাথে প্রতিপক্ষ জাহাঙ্গীর গ্যাং এর জায়গা আরএস ঝিলংজা মৌজার ৮৯৪৩,৮৯৪৪, বিএস ১৭১২৭,১৭১২৬,১৭১২৯,১৭১৩১।
অপর দিকে প্রায় বাইশ শত ফুট উত্তর- দক্ষিণ দূরত্বের ব্যবধানে বাদী নুরুল আলমের দখলীয় ১নং খাস খতিয়ানের জমি থেকে গোপনে গাছগুলো কেটে বিক্রি করছে জাহাঙ্গীর ও মালেকের নেতৃত্বে। দীর্ঘ ৫০ বছরের অধিক সময় ধরে বসতবাড়ি গড়ে তুলে বসবাস এবং জমিভোগদখল আছে। উক্ত জমির বন্দোবস্তি পেতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন (নং ২০১১/১৬৮২, তারিখ ১৬/৮/২০১১) করেন সে। অথচ এই জমিটি নিয়ে আদালতে একাধিক মামলা চলমান। এরমধ্যে ঝিলংজা মৌজা আরএস ৩৯/ ৮৫৯৫,৪২, ৪৬/৮৬৮৫ নম্বর দাগের বিরোধপূর্ণ জমি থেকে চুরি করে মুল্যবান গাছগুলো কেটে বিক্রি করে ইতিমধ্যে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জাহাঙ্গীর ও মালেক গ্যাং।

গত সোমবার (১৮ আগষ্ট) বিকালে জাহাঙ্গীর গংয়ের পক্ষের ডাকাত নুরু ও আবদুল মালেকের নেতৃত্বে ১০-১২ জন মিলে সরকারি খাসজমিতে বেড়ে উঠা শতবর্ষী কড়াই, গর্জন, সেগুন সহ বিভিন্ন প্রজাতির ১৫-১৬টি গাছ জোরপূর্বক কেটে ফেলেন। এর আগেও ওই চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা অসংখ্য মুল্যবান বড়বড় গাছ কেটে নিয়ে গেছে। এবারো ১০-১২ সন্ত্রাসী আমার প্রায় ৫-৮ লাখ টাকার গাছ কেটে নিয়ে গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কয়েকটি বড় বড় গাছের ৩০-৩৫ টুকরো কাটা গাছ মাটিতে পড়ে আছে। ৩ জন পুলিশ সদস্য এ গাছ তার সাথে জোরে জলের খোঁজখবর নিচ্ছেন।

অভিযোগকারী নুরুল আলম বলেন, সোমবার বিকালে জাল জালিয়াতির মুল হোতা আবদুল মালেক, ভুমি দস্যু জাহাঙ্গীর আলম, ডাকাত নুরুল ইসলাম নুরু, সেনাবাহিনী চাকরিচ্যুত সৈনিক মোর্শেদ আলম টিটু, সাইফুল ইসলাম সাফু, নাজমুল হোসেন ও ডাকাত কামাল পাশাসহ আরো ১০/১২ জন সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বেশ কয়েকটি শতবর্ষী বনজ( গামরি, গর্জন,সেগুন) ও ফলদ গাছ কেটে ফেলে। এর আগে আমাদের বাড়ির সীমানার ভিতর ঢুকে আমার ছেলেমেয়ে পুত্রবধূকে মারধর করে ঘরের দরজা ভেঙে মালামাল লুট করে নিয়ে যায় এবং আমার দীর্ঘ দিনের দখলভূক্ত ১ নং খাস খতিয়ানের জমি ও মাথা গুজার ঠাঁই ঘরবাড়ি কেড়ে নিয়ে এলাকাছাড়া করেছে। পরে বিষয়টি থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের বাধা দেয় ও থানায় যেতে বলে। এঘটনায় ওই চিহ্নিত ডাকাত ও ভুমিদস্যু সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে থানায় একটি নিয়মিত মামলা হয়েছে।

নুরুল আলম জানান, দীর্ঘদিন ধরে জমিটির ভোগদখলে আছেন তারা। প্রতিপক্ষ ভূমিদস্যু জাহাঙ্গীর আলম, তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী নুরুল ইসলাম প্রকাশ ডাকাত নুরু,জাল জালিয়াতি চক্রের প্রধান আবদুল মালেক, সন্ত্রাসী মোর্শেদ আলম, ডাকাত কামাল পাশা, সাইফুল ইসলাম, নাজমুল হোসেন, শহীদুল ইসলাম সোহেল, মাহমুদুল হক মাদু, আবদুল কাদের সহ আরো ১০/১২ জন জমিটি দখলে নেয়ার জন্য অনেক দিন ধরেই পাঁয়তারা করে আসছেন। এরই অংশ হিসেবে সোমবার বেশ কয়েকটি গাছ কাটেন তারা। এর আগেও প্রতিপক্ষের লোকজন তার জমি থেকে ২০-২৫টি মুল্যবান গাছ কেটে নিয়ে গেছে।

গাছ কাটায় জড়িতদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নুরুল আলমের জমি ও ঘরবাড়ি জবর দখল করে বসবাসকারীদের একজন মোর্শেদ আলম টিটু নামের ব্যক্তি রহমতপুর এলাকার মালিক তার বাপদাদার বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, নুরুল আলম নামের এরকম কাউকে সে চিনেনা, জানেনা। এই এলাকাতে যতো রাস্তাঘাট, নালা নর্ধমা, মসজিদ মাদ্রাসা, কবরস্থান তৈরি হয়েছে সবগুলো সে করেছেন।

সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হক গাছ কাটার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অভিযোগ পাওয়া মাত্রই দ্রুত ঘটনাস্থলে লোক পাঠিয়ে কাটা গাছ জব্দ করি। প্রায় ৩২ পিচ গাছ আবদুল মালেক নামের এক ব্যক্তির জিম্মায় রাখা হয়। জড়িত কাউকে ধৃত করা যায়নি। ৫/৬ টুকরো গামারি গাছ অফিসে নিয়ে আসা হয়। জড়িতদের বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা হবে।

সদর থানার এএসআই মাসুদ জানান, ত্রিপল নাইন (৯৯৯) এর মাধ্যমে অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল গিয়ে কয়েকটি বড় গাছ কাটা অবস্থায় দেখতে পেয়েছেন। গাছ কাটার সাথে জড়িতদের কাউকে খুঁজে পাননি। তবে, জমির মালিক দাবিদার আবদুল মালেক নামের একজনের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তাকে কাগজপত্র নিয়ে থানায় আসতে বলেছেন।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন মুঠোফোন রিসিভ করেননি। সদর ভুমি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানাকে গাছ কাটার বিষয়ে অবহিত করলে সে ৯৯৯ এ অভিযোগ করার পরামর্শ দেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here