মো:নুরুল ইসলাম সুজন মালয়েশিয়া:
মালয়েশিয়া এনসিপির ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্স এর সভাপতি জনাব মো:এনামুল হক। মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনা এর নিকট এই দাবি জানান।
রবিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বিকাল ৪.০০ ঘটিকায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগে কুয়ালালামপুরে অবস্থিত জি-টাওয়ার হলরুমে মাননীয় নির্বাচন কমিশনারের সাথে জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভোটদান বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এ স্মারক লিপি প্রদান করেন।
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশীদের পূর্ণ ভোটাধিকারের দাবি।
মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার,দেশের প্রধান নির্বাচনী আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর ২৭(১) ধারার মাধ্যমে বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি ভোটারদেরকে ডাকযোগে ব্যালটে ভোট দেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে ২০০৮ সালে উক্ত আইনি অধিকার দেওয়ার বছরেও প্রবাসীদের জন্য কখনোই পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থায় ভোট গ্রহণে কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে ২০০৮-২০২৪ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো প্রবাসী ভোটার ভোট দিতে পারেননি।
সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকে দেড় কোটিরও বেশি প্রবাসীর পক্ষ থেকে আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যে নির্বাচন কমিশন আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকারের বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু আমার গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে পোস্টাল ব্যালট বা অনলাইন ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এখনো কোন স্পষ্ট রোডম্যাপ, সময়সীমা বা গাইডলাইন প্রকাশ করা হয়নি। শুধুমাত্র কয়েকটি দেশে সীমিত পাইলট প্রকল্প চালু করার কথা বলা হচ্ছে। আমাদের দূতাবাস ও কনসুলেট গুলতে এখনো নিবন্ধন শুরুর কোন কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এনিয়ে সকল প্রবাসীরা অনেক ধোঁয়াশার মধ্যে আছে।
নির্বাচন কমিশনের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশের মোট ভোটার ১২ কোটি ৩৭ লাখ। হিসাব অনুযায়ী প্রবাসে থাকা ভোটারের সংখ্যা প্রায় এক কোটি ৩৪ লাখ। কিন্তু এই প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত।
নির্বাচনের আয়োজনের জন্য যথেষ্ট সময় হাতে থাকার পরও এই সীমিত পাইলট আকারে ভোটের আয়োজন ঘোষনা আমাদের জন্য মেনে নেয়া অসম্ভব। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কাছে এখন একটি ঐতিহাসিক সুযোগ এসেছে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া যাতে প্রবাসীরা তাদের পূর্ণ ভোটাধিকার পেতে পারে।
আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে তিনটি স্পষ্ট দাবি তুলে ধরছি-
১। অনলাইন নিবন্ধন প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করুন এবং একটি পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ ১৪ই আগস্টের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে।বিশ্বের যেসব দেশে প্রবাসী ভোটার রয়েছে, সেখানে অনলাইনে নিবন্ধন চালু এবং শেষ হওয়ার নির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণা করতে হবে। কোন দেশে, কবে, কীভাবে নিবন্ধন হবে-তা স্পষ্টভাবে জানাতে হবে যেন প্রবাসীরা প্রস্তুতি নিতে পারেন।
২। ভোট গণনা ও ট্র্যাকিং কীভাবে স্বচ্ছতার সাথে নিশ্চিত হবে তা ১৪ই আগস্টের মধ্যে জানাতে হবে। পোস্টাল বা অনলাইন ব্যালটে দেওয়া ভোট কীভাবে সঠিকভাবে গণনায় অন্তর্ভুক্ত হবে, কীভাবে তা ট্র্যাক করা যাবে, এবং ভোটের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা কীভাবে রক্ষা করা হবে-এসব প্রশ্নের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিতে হবে, যেন আমরা আমাদের মতামত ও পরামর্শ যথাসময়ে দিতে পারি।
৩। প্রবাসী ভোটারদের উদ্বেগ দূর করতে প্রতি দুই সপ্তাহ অন্তর একটি অনলাইন ব্রিফিং ও আপডেট প্রদান করতে হবে, এবং কোন দেশে, কী প্রক্রিয়ায় ভোটগ্রহণ হবে তা ওয়েবসাইট ও সামাজিক মাধ্যমে নিয়মিতভাবে প্রকাশ করতে হবে। এই দাবির সঙ্গে শুধু আমরা নই পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে থাকা লাখো প্রবাসী বাংলাদেশিও একমত। আমরা দৃঢ়ভাবে আশা করি, আপনি নির্বাচন প্রস্তুতি-সংক্রান্ত সকল কার্যক্রমে এই দাবিগুলোর প্রতিফলন ঘটাবেন।
প্রতি মাসে আমাদের রেমিটেন্স যোদ্ধারা যে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশে পাঠাচ্ছেন, তা শুধু তাঁদের পরিবারের জীবনধারাই নয় বরং বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও গ্রামীণ জীবনের প্রাণশক্তি হিসেবে কাজ করছে।
তাই এই রেমিটেন্স যোদ্ধাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা এখন শুধু সময়ের দাবি নয়, বরং এটি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সামনে একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব ও সুযোগ।
আমরা আশা করি, আপনি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করবেন এবং এই ন্যায্য ও সাংবিধানিক দাবির দ্রুত বাস্তবায়ন করবেন।
প্রবাসীদের প্রশ্ন
ক. ভোটার নিবন্ধন
১। প্রবাসী ভোটারদের নিবন্ধন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও ব্যবহৃত পদ্ধতিতে করার উদ্যোগ কেন নেওয়া হচ্ছে না? বিশেষভাবে, আধুনিক e-KYC পদ্ধতি ব্যাবহার কেন করা হচ্ছে না?
২। নি.ক. এখনো পরিষ্কার করেনি যে প্রবাসীরা কীভাবে “ভোটার” হিসেবে নিবন্ধিত হবেন? ওয়েবসাইট/অ্যাপের মাধ্যমে না দূতাবাসে সরাসরি?
৩। ওয়েবসাইটে e-KYC পদ্ধতিতে নিবন্ধন হলে সেটি কবে থেকে কার্যকর হবে? একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ প্রয়োজন।
৪। দূতাবাসে নিবন্ধন হলে, প্রশিক্ষিত কর্মকর্তারা কবে ও কীভাবে সেখানে নিয়োজিত হবেন?
৫। এনআইডি না থাকলে পাসপোর্ট বা জন্ম সনদের মাধ্যমে নিবন্ধনের সুযোগ থাকবে কি?
৬। বিদেশি মোবাইল নম্বর দিয়ে নিবন্ধনের সুযোগ ও ওটিপি ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে কি?
৭। প্রবাসী ভোটার তালিকা ও দেশের তালিকার মধ্যে ডুপ্লিকেট যাচাইয়ের ব্যবস্থা থাকবে কি? গোপনীয়তা
রক্ষার জন্য কী ব্যবস্থা থাকবে? ৮। NID Wallet অ্যাপে ফেস রিকগনিশন থাকা সত্ত্বেও কেন এই অ্যাপ দিয়েই নিবন্ধন হচ্ছে না?
৯। যেসব দেশে প্রবাসী ভোট গ্রহণ হবে, সেই দেশের তালিকা কবে প্রকাশ পাবে? সেই দেশের দ্বৈত নাগরিকেরা কি নিবন্ধন করতে পারবেন?
১০। যেহেতু পাসপোর্টে সকল তথ্য রয়েছে, কেবল পাসপোর্টের তথ্য যাচাই করে অনলাইনে নিবন্ধন হচ্ছেনা কেন?
আমরা একটি পূর্ণ রোডম্যাপ চাই: ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়া, নিবন্ধনের শর্তাবলি, নিবন্ধন শুরুর ও শেষের তারিখ, তালিকা প্রকাশ, সংশোধনের সময়সীমা, পাইলট মক ভোট ইত্যাদি।
খ. ডাকযোগ বা অনলাইন ভোট প্রদান
১১। অনলাইনে স্বাক্ষর আপলোডের পরিবর্তে কি ওটিপি ব্যবহার করা যাবে?
১২। ব্যালটে ট্র্যাকিং বা সিকিউরিটি চিহ্ন থাকবে কি? জাল ব্যালট ঠেকাতে কী ব্যবস্থা?
১৩। রিটার্ন খাম নির্বাচন কমিশন দেবে, নাকি ভোটারকে নিজ খরচে পাঠাতে হবে?
১৪ । ভোটারের পরিচয় ও গোপনীয়তা রক্ষার ব্যবস্থা কী? আসন নম্বর খামে বা ব্যালটে ছাপানো সম্ভব কি?
১৫। ব্যালট দূতাবাসে পাঠানো হবে, না প্রবাসী ব্যালট সেন্টারে? দীর্ঘ সময় রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কে নেবে?
১৬। ডাকযোগে ভোটের জন্য কতদিন বরাদ্দ থাকবে? ব্যালটগুলো ভোটের এক সপ্তাহ আগে নির্বাচন কমিশনে পৌঁছাবে কি?
১৭। মধ্যপ্রাচ্যের রাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে বৃহৎ আকারে ভোট হলে তাদের প্রতিক্রিয়া বিবেচনায় নেয়া হয়েছে কি?
১৮। নির্বাচনী তফসিলে প্রবাসী ভোটের প্রতিটি ধাপ অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি ব্যালট পাঠানো, গ্রহণের শেষ তারিখ, ফলাফল ঘোষণা ইত্যাদি।
১৯। প্রবাসী ভোটের ফল কবে প্রকাশ পাবে এবং কিভাবে দেশীয় ফলাফলের সাথে যুক্ত হয়।